ঢাকা: সম্প্রতি ঢাকায় আসা জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো তার দুই মেয়ের কল্যাণের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশি স্বামী ইমরান শরীফের সঙ্গে আবার সংসার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এরিকো তার স্বামী ইমরান শরীফ এবং দুই মেয়ে জেসমিন মালেকা ও লায়লা লিনাকে নিয়ে জাপানে ফিরতে চান। মঙ্গলবার এরিকোর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির গণমাধ্যমকে জানান, এরিকো ইমরান শরীফ দুই সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত ও কল্যাণের কথা ভাবছেন না। সঙ্গে থাকতে চাই ইমরান শরীফের আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মোহাম্মদের মাধ্যমে আমরা এই প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করব। এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এ ক্ষেত্রে সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদকে পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করতে বলেন। আদালত বলেন, শিশুদের জন্য ভালো সমাধান হলে তাদের ভবিষ্যৎ ভালো হবে এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। দেশ বিদেশের সবার জন্য ভালো হবে। আদালত আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মামলার শুনানি মুলতবি করেছেন। এ সময় গুলশানের বাসায় একদিন মা ও বাবা সন্তানদের সঙ্গে থাকেন বলে জানা গেছে। আদালতে শিশুটির বাবার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, অ্যাডভোকেট ফওজিয়া করিম ফিরোজ ও ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। শিশুটির মা পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। গত ৩১শে আগস্ট হাইকোর্টের আদেশে দুই জাপানি শিশু জেসমিন মালেকা ও লায়লা লিনা তাদের বাবা-মাসহ রাজধানীর গুলশানে চার কক্ষের একটি বাড়িতে থাকবে। তারা সেখানে সর্বোচ্চ ১৫ দিন অবস্থান করবে। ফ্ল্যাট ভাড়া উভয় পক্ষই বহন করবে। এর আগে গত ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট দুই জাপানি শিশুকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তেজগাঁওয়ে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দেন।এ সময়ে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জাপানি মা ও ৩টা পর্যন্ত রাত ৮টা থেকে বাঙালি বাবা সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। ৩১ আগস্ট শিশুরা হাইকোর্টে হাজিরা দেবে।

ওই দিনই আদালত পরবর্তী আদেশ দেবেন। 22শে আগস্ট, 10 এবং 11 বছর বয়সী দুটি মেয়েকে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) হেফাজতে নিয়েছিল। গত ১৯ আগস্ট দুই জাপানি শিশু জেসমিন মালেকা ও লায়লা লিনা এবং তাদের বাবা শরীফ ইমরানকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দুই শিশুকে ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো (৪৬) হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস পিটিশন দাখিল করেন। রিটে ওই নারী দুই মেয়েকে নিজের হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশনা চান। 11 জুলাই, 2008, জাপানি নাগরিক এরিকো নাকানো (46) এবং বাংলাদেশী আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (58) জাপানের আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন।

বিয়ের পর তারা টোকিওতে থাকতে শুরু করেন। 12 বছরের সংসারে তিন মেয়ের জন্ম হয়। তারা হলেন- জেসমিন মালেকা (11), লায়লা লীনা (10) এবং সানিয়া হেনা (7)। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। মালেকা, লিনা এবং হেনা টোকিওর চোফো সিটিতে জাপানের আমেরিকান স্কুলের (এএসআইজে) ছাত্রী ছিলেন। তারা সেখানে পড়াশোনা করত। কিন্তু পারিবারিক বিরোধের কারণে চলতি বছরের 18 জানুয়ারি এরিকো জাপানের আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য মামলা করেন। এরিকোর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, তাদের এখনো ডিভোর্স হয়নি। এরিকো বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করলেও তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এখনো সমঝোতার সুযোগ আছে। শিশির মনির জানান, কয়েকদিন পর গত ২১ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার বড় মেয়েকে সঙ্গে নিতে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো রাজি না হওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। পরে ইমরান বড় দুই মেয়েকে স্কুল বাস থেকে তুলে তার ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়।
এরপর শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে ২৫ জানুয়ারি শিশুদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো রাজি হননি। এমতাবস্থায় ২৮ জানুয়ারি এরিকো তার সন্তানদের হেফাজতে রাখার জন্য টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে দেখা করার নির্দেশ দিয়েছেন। পরবর্তীতে ৯ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট পান। এরপর ইমরান তার বড় দুই মেয়েকে নিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। এদিকে, টোকিওর পারিবারিক আদালত ৩১ মে দুই মেয়েকে এরিকোর হেফাজতে হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়। এ অবস্থায় এরিকো ১৮ জুলাই শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলায় আসেন। এরপর তিনি মেয়েদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন। ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ইমরান তার সন্তানদের সাথে দেখা করতে রাজি হননি। অবশেষে শিশুদের সাথে দেখা করার সুযোগ পাওয়া ছিল একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা।

২৭ জুলাই এরিকোকে চোখ বেঁধে গুলশান থেকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়। এরপর মেয়েদের কোনো একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দেখা করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে তাদের আবার চোখ বেঁধে একই গাড়িতে করে গুলশানে নিয়ে যাওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে,

এরিকো বাংলাদেশের হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন যাতে দুই শিশুকে আদালতে আনার এবং তার নিজের হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ১৯ আগস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ দুই শিশু ও তাদের বাবার বাংলা ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এক মাসের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বাবা শরীফ ইমরান ও শাশুড়ি আমিনা জেবিনকে ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতে হাজিরা নিশ্চিত করতে গুলশান ও আদাবর থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালত আদেশসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারি করেন। আদালতে রিটকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *